হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
সবচাইতে দ্রুত কাজ
করে
একিউট ডিজিজ (Acute disease) বা
ইমারজেন্সী অসুখ-বিসুখ নিরাময়ে
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অবলম্বন করার
কথা বললে কেউ কেউ অবাক হতে পারেন।
কেননা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সমাজে যে-সব
মিথ্যা কথা প্রচার করা হয়, তার একটি
হলো “হোমিও ঔষধ দেরিতে কাজ করে
বা ধীরে ধীরে কাজ করে”। অথচ বাস্তব
সত্য হলো, হোমিও ঔষধ পুরোপুরি লক্ষণ
মিলিয়ে দিতে পারলে, সেটি বাজারে
আসা হাইপাওয়ারের লেটেস্ট
এন্টিবায়োটিকের চাইতেও অন্তত একশ
গুণ দ্রুত কাজ করে থাকে। হোমিওপ্যাথি
একমাত্র বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা
পদ্ধতি। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
বিজ্ঞানের নামে প্রতারনা ছাড়া আর
কিছুই নয়। তাহারা রোগ নির্ণয় এবং
চিকিৎসার নামে যদিও খুবই উচ্চ
প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকুক
না কেন ; আসলে সেগুলো হলো মানুষকে
বোকা বানানোর এবং পকেট ভর্তি করার
এক ধরণের অত্যাধুনিক ফন্দি মাত্র।
তাদের নানা রকমের চটকদার রঙের এবং
ডিজাইনের দামী দামী ঔষধগুলো কোন
জটিল রোগই সারাতে পারেনা বরং
চিকিৎসার নামে উপকারের চাইতে
ক্ষতিই করে বেশী।
হোমিওপ্যাথির রয়েছে প্রতিষ্টিত
বৈজ্ঞানিক নীতিমালা বিগত দুইশ
বছরেও যার কোন পরিবর্তন হয়নি এবং
কেয়ামত পযর্ন্ত রদবদল হবে না।
পক্ষান্তরে অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রের
কোন বৈজ্ঞানিক নীতিমালা নেই।
তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের
অনুসরণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে
আন্দাজ, অনুমান, কুসংস্কার, ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা, হোমিওপ্যাথির আংশিক
অনুসরণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে
চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করে থাকে।
অর্থাৎ এতে দশ ভাগ আছে বিজ্ঞান আর
নব্বই ভাগ হলো গোজামিল।
হোমিওপ্যাথিতে একই ঔষধ দু’শ বছর
পূর্বেযেমন কাযর্কর ছিল, আজও তা
সমানভাবে কাযর্কর প্রমাণিত হচ্ছে
বলেই সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। পক্ষান্তরে
অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রের কোন ঔষধই
দশ-বিশ বছরের বেশী কাযর্কর থাকে
না। একদিন যেই ঔষধকে বলা হয়
মহাউপকারী-জীবনরক্ষাকারী-যাদুকরী,
কয়েক বছর পরই তাকে বলা হয় অকাযর্কর-
ক্ষতিকর-বর্জনীয়। আজ যেই ঔষধের নাম
মানুষের মুখে মুখে ফিরে, কাল সেটি
হারিয়ে যায় ইতিহাসের পাতা থেকে।
কাজেই আমাদের ভেবে দেখা উচিত যে,
যেই সিষ্টেমকে কিছু দিন পরপরই
পরিবর্তন-পরিবর্ধন-সংস্কার করতে হয়,
তাকে কিভাবে নির্ভরযোগ্য /
বিজ্ঞানসম্মত বলা যায় ? আজ থেকে
দুইশত বৎসর পূর্বে মহা
চিকিৎসাবিজ্ঞানী জার্মান
এলোপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান (এম.ডি.) হোমিওপ্যাথি
নামক এমন একটি মানবিক চিকিৎসা
বিজ্ঞান আবিষ্কার করেন, যাতে সূঁই
দিয়ে শরীরে ঔষধ ঢুকানো, পায়খানার
রাস্তা দিয়ে ঔষধ ঢুকানো, সামান্য
ব্যাপারে শরীরে ছুরি-চাকু প্রয়োগ করা,
ঔষধের দাম দিতে না পারায় দরিদ্র
মানুষেরবিনা চিকিৎসায় ধুকেধুকে
মৃত্যুবরণ করা, প্যাথলজীক্যাল টেস্টের
নামে অসহায় রোগীদের পকেট কাটা,
চিকিৎসার নামে রোগ-ব্যাধিকে যুগের
পর যুগ লালন করা প্রভৃতি নিষ্ঠুরতা-
অমানবিকতা থেকে মানবজাতি মুক্তি
পেতে পারে। এই অসাধ্য সাধন করার
কারণে তাকে সারাজীবন তৎকালীন
এলোপ্যাথিক ডাক্তারদের অনেক
অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল
এবং সে পযর্ন্ত তাকে বৃদ্ধ বয়সে প্রিয়
জন্মভূমিও ত্যাগ করতে হয়েছিল।
রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্তঅসুস্থমানুষের
মর্মান্তিক বেদনাকে যিনি নিজের হৃদয়
দিয়ে সবচেয়ে বেশী উপলব্ধি করতে
পেরেছিলেন, তাঁর নাম ডাঃ স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান। প্রচলিত চিকিৎসা
বিজ্ঞানসমুহের ইতিহাস নিয়ে যারা
ব্যাপক পড়াশুনা করেছেন, তারা সকলেই
এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, তিনি
ছিঁলেন পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত জন্ম
নেওয়া সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের
আবিষ্কারক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
কেবল একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসা
বিজ্ঞানীই ছিলেন না; একই সাথে
তিনি ছিলেন মানব দরদী একজন বিশাল
হৃদয়ের মানুষ, একজন মহাপুরুষ, একজন
শ্রেষ্ট কেমিষ্ট, একজন পরমাণু
বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসক,
একজন অণুজীব বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট
ফার্মাসিষ্ট, একজন সংস্কারক, একজন
বহুভাষাবিদ, একজন দুঃসাহসী সংগঠক,
একজন অসাধারণ অনুবাদক, একজন নেতৃপুরুষ,
একজন বিদগ্ধ লেখক, একজন সত্যিকারের
ধার্মিক ব্যক্তি, একজন পরোপকারী-
ত্যাগী মানব, একজন সুযোগ্য শিক্ষক,
একজন আদর্শ পিতা, একজন রোমান্টিক
প্রেমিক।
তৎকালের চিকিৎসা বিজ্ঞান এতই জঘন্য
এবং বর্বরতায় পুর্ণ ছিল যে, হাসপাতাল
বা ডাক্তারের চেম্বারকে কশাইখানা
বলাই যুক্তিযুক্ত ছিল। সেখানে
রোগীদেরকে রাখা হতো ভিজা এবং
গরম কক্ষে, অখাদ্য-কুখাদ্য খেতে দেওয়া
হতো, দৈনিক কয়েকবার রোগীদের শরীর
থেকে রক্ত বের করে ফেলে দিয়ে দুর্বল
করা হতো, রোগীদের শরীরে জোঁক
লাগিয়ে (Leeching), কাপের মাধ্যমে
(cupping) অথবা রক্তনালী কেটে
(venesection) রক্তপাত করা হতো,
পায়খানা নরম করার ঔষধ (purgatives)
খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক দিন যাবত
রোগীদের পাতলা পায়খানা করানো
হতো, বমি করানো হতো ইত্যাদি
ইত্যাদি। সিফিলিসের রোগীদের প্রচুর
মার্কারী খাওয়ানোর মাধ্যমে লালা
নিঃসরণ (salivation) করানো হতো এবং
এতে অনেক রোগীই কয়েক বালতি লালা
থুথু আকারে ফেলতো এবং অনেক রোগীর
দাঁত পর্যন্ত পড়ে যেতো। অধিকাংশ
রোগী (চিকিৎসা নামের) এই কুচিকিৎসা
চলাকালীন সময়েই মারা যেতো।
শরীরের মাংশ অর্থাৎ টিস্যুকে গরম
লোহা অথবা বাষ্প দিয়ে পুড়ানো হতো
(cauterization), গরম সুঁই দিয়ে খুচিয়ে
চামড়ায় ফোস্কা ফেলা হতো (blistering),
লাঠি অথবা পাথরের আঘাতে শরীরে
কৃত্রিম ফোঁড়া-ঘা-ক্ষত সৃষ্টি করা হতো
এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘা-ক্ষত
মাসের পর মাস বিনা চিকিৎসায় ফেলে
রাখা হতো। উপরে বর্ণিত সকল কিছুই
করা হতো মারাত্মক জটিল রোগে
আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা
বা রোগমুক্তির নামে (যা আজকের দিনে
কোন সুস্থমানুষের পক্ষে কল্পনারও
বাইরে)।
হোমিওপ্যাথিকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ বা
সামগ্রিক (holistic) চিকিৎসা বিজ্ঞান
অথবা মনো-দৈহিক গঠনগত (constitutional)
চিকিৎসা বিজ্ঞান। অর্থাৎ এতে কেবল
রোগকে টার্গেট করে চিকিৎসা করা হয়
না বরং সাথে সাথে রোগীকেও টার্গেট
করে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর
শারীরিক এবং মানসিক গঠনে কি কি
ত্রুটি আছে, সেগুলোকে একজন হোমিও
চিকিৎসক খুঁজে বের করে তাকে
সংশোধনের চেষ্টা করেন। রোগটা কি
জানার পাশাপাশি তিনি রোগীর মন-
মানসিকতা কেমন, রোগীর আবেগ-
অনুভূতি কেমন, রোগীর পছন্দ-অপছন্দ
কেমন, রোগী কি কি জিনিসকে ভয় পায়,
কি ধরণের স্বপ্ন দেখে, ঘামায় কেমন, ঘুম
কেমন, পায়খানা-প্রস্রাব কেমন, পেশা
কি, কি কি রোগ সাধারণত বেশী বেশী
হয়, অতীতে কি কি রোগ হয়েছিল, বংশে
কি কি রোগ বেশী দেখা যায়, রোগীর
মনের ওপর দিয়ে কি কি ঝড় বয়ে গেছে
ইত্যাদি ইত্যাদি জেনে রোগীর
ব্যক্তিত্ব (individuality) বুঝার চেষ্টা
করেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন
করেন। এই কারণে হোমিওপ্যাথিক
চিকিৎসায় এমন রোগও খুব সহজে সেরে
যায়, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে
কল্পনাও করা যায় না।
একজন হোমিও চিকিৎসক রোগীর
শারীরিক কষ্টের চাইতে বেশী গুরুত্ব
দেন রোগীর মানসিক অবস্থাকে।
কেননা হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা
প্রমাণ করেছেন যে, অধিকাংশ জটিল
রোগের সূচনা হয় মানসিক আঘাত (mental
shock) কিংবা মানসিক অস্থিরতা/
উৎকন্ঠা/দুঃশ্চিন্তা (anxiety) থেকে।
মোটকথা মারাত্মক রোগের প্রথম
শুরুটাহয় মনে এবং পরে তা ধীরে ধীরে
শরীরে প্রকাশ পায়। এজন্য হোমিও
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মনই
হলো আসল মানুষটা (mind is the man)।
তাছাড়া পৃথিবীতে হোমিও ঔষধই
একমাত্র ঔষধ যাকে মানুষের শরীর ও মনে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করা
হয়েছে। এই কারণে হোমিও ঔষধ মানুষের
শরীর ও মনকে যতটা বুঝতে পারে, অন্য
কোন ঔষধের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা রোগ সারাতে
না পারলেও প্রতিটি রোগের এক বা
একাধিক নাম দিতে প্রাণপাত করে
থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা
ল্যাটিন বা গ্রীক ভাষায় রোগের এমন
কঠিন এবং বিদঘুটে নাম দেন যে, রোগের
নাম শুনেই ভয়ে রোগীদের লোম খাড়া
হয়ে যায়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে
রোগের নামের এক কানাকড়িও মূল্য নাই।
চিকিৎসা বিজ্ঞানকে যিনি রোগের
নামের গোলামী থেকে মুক্তি দিয়েছেন
তার নাম হ্যানিম্যান। এই কৃতিত্বের
দাবীদার একমাত্র তিনি। তাই
এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা রোগের যত
কঠিন কঠিন নামই দিক না কেন, তাতে
একজন হোমিও ডাক্তারের ভয় পাওয়ার
বা দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নাই। রোগের
লক্ষণ এবং রোগীর শারীরিক-মানসিক
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঔষধ দিতে থাকুন।
রোগের নাম যাই হোক না কেন, তা
সারতে বাধ্য। হ্যানিম্যান তাই শত-
সহস্রবার প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়ে
গেছেন। রোগীর মাথার চুল থেকে
পায়ের নখ পযর্ন্ত সমস্ত লক্ষণ সংগ্রহ করুন
এবং তার মনের গহীনে অন্তরের অলিতে-
গলিতে যত ঘটনা-দুর্ঘটনা জমা আছে, তার
সংবাদ জেনে নিন। তারপর সেই অনুযায়ী
ঔষধ নির্বাচন করে খাওয়াতে থাকুন। যে-
কোনরোগ বাপ বাপ ডাক ছেড়ে পালাবে।
রোগের নাম নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করার
কোন দরকার নাই। হোমিও চিকিৎসায়
যদি আপনার রোগ নির্মূল না হয় (অথবা
কোন উন্নতি না হয়), তবে
হোমিওপ্যাথির ওপর বিশ্বাস হারাবেন
না। কেননা এটি হোমিও ডাক্তারের
অজ্ঞতা / ব্যর্থতা। হোমিওপ্যাথির কোন
ব্যর্থতা নাই। সূর্যপূরব দিকে উদিত হয়ে
পশ্চিম দিকে অস্ত যায়- ইহা যেমন
চিরন্তন সত্য ; হোমিওপ্যাথির সকল
থিওরীও তেমনি চিরন্তন সত্য। এতে কোন
অবৈজ্ঞানিক কথা বা বিজ্ঞানের
নামে গোজামিলের স্থান নাই।
এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা নানান ধরনের
রোগ নির্ণয়ের জন্য নানান রকমের
টেস্টের ফ্যাশন চালু করেছেন। আসলেই
এলোপ্যাথি একটি ফ্যাশন বা হুজুগ সবর্স্ব
চিকিৎসা পদ্ধতি। গত একশ বছর যাবত
তারা যে ফ্যাশন চালু করেছে, তাহলো
কোন সিরিয়াস রোগী পেলেই তাকে
রক্ত দিচ্ছে। ইহার পূরবে প্রায় দুই-তিনশ
বছর তাদের ফ্যাশন ছিল কোন সিরিয়াস
রোগী পেলেই তারা রোগীদের রগ কেটে
(venesection) শরীর থেকে কয়েক লিটার
রক্ত ফেলে দিতো। তখন তাদের বিশ্বাস
ছিল যে, সকল জটিল রোগের মূল কারণ
হলো শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশী
হওয়া (plethora)। তাদের কয়েকশ বছর
ব্যাপী সেই শয়তানী পৈশাচিক
চিকিৎসায় কত কোটি কোটি বনি আদম
যে অকালে কবরে চলে গেছে ; যাদের
তালিকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে
মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট-
রাজা-বাদশা এমনকি খ্রিস্টানদের
প্রধান ধমর্গুরু পোপ পযর্ন্ত আছেন।
তাদের সেই শয়তানী প্র্যাকটিস বন্ধ
করে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য মহাত্মা
হ্যানিম্যানকে অন্তত ৫০ বছর সারা
বিশ্বে প্রচারনা যুদ্ধ চালাতে হয়েছে।
সে যাক, স্বয়ং এলোপ্যাথিক
বিজ্ঞানীরাই স্বীকার করেন যে,
বিভিন্ন রোগ নিণর্য়ের জন্য করা এসব
টেস্টের শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল
রিপোর্ট আসে। আর রিপোর্ট ভুল হলে
রোগের চিকিৎসাও হবে ভুল এবং আপনার
মৃত্যু হবে ভুল চিকিৎসায়। আবার কিছু
কিছু টেস্ট আছে যাতে আপনার যৌন
ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে আবার কোন কোন
টেস্টের কারণে আপনিসহ আপনার পুরা
বংশ যক্ষ্মা রোগীতে পরিণত হতে
পারেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো,
অধিকাংশ টেস্টই মানুষের শরীরে
ক্যানসার সৃষ্টি করে থাকে। এসব টেস্ট
প্রচলনের মূল উদ্দেশ্য হলো বহুজাতিক
কোম্পানী এবং ডাক্তারদের পকেট
ভারী করা।
হ্যাঁ, কিছু কিছু প্যাথলজীক্যাল বা
অন্যান্য টেস্ট হোমিওপ্যাথিক
ডাক্তারদেরকেও রোগের বিভিন্ন দিক
সম্পর্কে তথ্য পেতে সহায়তা করে থাকে
বটে। তবে রোগীকে চমক দেখিয়ে বোকা
বানানো কিংবা নিজের পকেট ভারী
করার হাতিয়ার হিসাবে এসব টেস্টকে
হোমিও ডাক্তাররা ব্যবহার করতে
অভ্যস্ত নন। যদিও এলোপ্যাথিক
ডাক্তাররা রোগ নির্ণয়ের জন্য নানা
রকমের টেস্টের পদ্ধতি চালূ করেছেন,
কিন্তু অতীব দুঃখের / বিস্ময়ের বিষয় এই
যে, রোগ কি জিনিস তা-ই আজ পযর্ন্ত
তারা বুঝতে পারেন নাই। ফলে তারা
রোগ নামক এই কিম্ভুতকিমাকার বস্তুকে
ভেঙ্গে একেবারে টুকরা টুকরা করে
ফেলেছেন । কেউ নিয়ে আছেন হৃদরোগ,
কেউ বাতরোগ, কেউ চর্মরোগ, কেউ
যৌনরোগ,কেউ স্নায়ুরোগ, কেউ
হাড্ডিরোগ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রত্যেকে
তার টুকরার পেছনে খাটতে খাটতে জান
তেজপাতা করে ফেলেছেন। ফলে রোগ
সম্পর্কে তাদের ধারনা জন্মেছে
অনেকটা ছোটবেলায় পড়া সেই ঈশপের
গল্পের সাত অন্ধের হাতি দেখার মতো।
যাদের একজন হাতির পা হাতড়িয়ে
ধারণা করেছিল হাতি বুঝি গাছের মতো
আবার আরেকজন হাতির লেজ হাতড়িয়ে
ধারণা করেছিল যে হাতি বুঝি বাঁশের
মতো ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে
সত্যিকারের হাতি কেমন তা যেমন সেই
অন্ধরা বুঝতে পারেনি, তেমনি রোগের
সত্যিকারের রূপ সম্পর্কেও সে-সব
ডাক্তাররা আজও জানতে পারেনি।
যেহেতু হোমিও ঔষধের মূল্য খুবই কম,
সেহেতু হোমিও ঔষধের ব্যবসা তেমন
লাভজনক নয়। ফলে হোমিওপ্যাথিক
চিকিৎসা যদি পৃথিবীর সকলের নিকট
গ্রহনযোগ্য হয়ে যায়, তাহলে
পৃথিবীব্যাপী বহুজাতিক ঔষধ
কোম্পানীসমূহের বিলিয়ন বিলিয়ন
ডলারের ঔষধ ব্যবসা মাঠে মারা যাবে।
এজন্য বড় বড় ঔষধ কোম্পানীগুলি
হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ানোর
জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে
থাকে। পাশাপাশি নিজেদের
আজেবাজে সব মারাত্মক ধ্বংসাত্মক
ক্ষতিকর ঔষধের কাল্পনিক গুণগান
প্রচারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে
সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকার
পাহাড় গড়ে তোলে। আমরা অনেকেই
জানি না যে, এলোপ্যাথিক
মেডিক্যালকলেজগুলোতে কি পড়ানো
হবে, তাদের পাঠ্য-পুস্তকগুলোতে কি
লেখা থাকবে, তাদের চিকিৎসা
বিজ্ঞানীরা কি কিবিষয় নিয়ে গবেষণা
করবেন, মেডিক্যাল জানার্লগুলোতে কি
কি আবিষ্কারের খবর ছাপানো যাবে
আর কি কি আবিষ্কারের খবর ছাপানো
যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি সবই নিয়ন্ত্রণ
করে এসব নরঘাতক রক্তচোষা বহুজাতিক
ঔষধ কোম্পানীগুলো।রোগের জন্য ভুল
হোমিও ঔষধ দীর্ঘদিন সেবনেও
মারাত্মক কোন ক্ষতি হয় না; পক্ষান্তরে
রোগের জন্য প্রযোজ্য সঠিক
এলোপ্যাথিক ঔষধও দীর্ঘদিন সেবনে এক
বা একাধিক নতুন রোগের সৃষ্টি করে
থাকে। ১৯৬৪ সালে যখন এলোপ্যাথিক
ঔষধ থেলিডোমাইড (thalidomide)
মার্কেটে আসে, তখন দাবী করা হয়েছিল
যে, এটি টেনশানের বা মাথা ঠান্ডা
রাখার কিংবা নিদ্রাহীনতার জন্য এ
যাবত কালের সবচেয়ে ভালো এবং
নিরাপদ ঔষধ।
কিন্তুদুই বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে
জানা যায় যে, যে-সমস্ত গর্ভবতী মহিলা
থেলিডোমাইড খেয়েছেন, তারা হাত
এবং পা বিহীন পঙ্গু-বিকলাঙ্গ সন্তানের
জন্ম দিয়েছেন। পশ্চিম জার্মানীর
স্বাস্থ্য বিভাগ একাই থেলিডোমাইড
খাওয়ার ফলে দশ হাজার বিকলাঙ্গ
শিশুর জন্মের ঘটনা রেকর্ড করেছে।
সত্যিকার অর্থে এটি ছিল চিকিৎসার
ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য এবং নির্মম
ঘটনা। অস্ট্রিয়ার হোমিও চিকিৎসা
বিজ্ঞানী ডাঃ জর্জ ভিথুলকাস ২০ই
জুলাই ২০০০ সালে ডঃ পিটার মোরেলের
সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে,
“প্রেসক্রিপশান ভিত্তিক এসব
রাসায়নিক ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহারের
ফলে বিপর্যয়কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার
সৃষ্টি হচ্ছে, যা পাশ্চাত্যের লোকদের
সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে দ্রুত
পরিবর্তন করে ফেলছে। বিষয়টি কয়েক
প্রজন্মের মধ্যে প্রকাশ লাভ করবে।
আমাদেরকে ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখার জন্য
অপেক্ষা করতে হবে। ব্যাপারটি কেবল
আমেরিকান জনগণের বেলাতেই নয়; বরং
সমগ্র সুসভ্য জগতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য
যারা (বহুল) প্রচলিত (এলোপ্যাথিক)
চিকিৎসা পদ্ধতি বেশী ব্যবহার করছে
(ক্যামিকেল ঔষধ এবং টিকা/
ভ্যাকসিন)।
আমেরিকান লোকেরা যেহেতু এগুলো
বেশী ব্যবহার করছে, সেহেতু ইহার
মারাত্মক কুফল তাদের মধ্যেই প্রথম
প্রকাশ পাবে। ক্যানসার, আলজেইমারস
ডিজিজ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি,
নিউরোমাসকুলার ডিজিজ, মাল্টিপল
স্ক্লেরোসিস, কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ,
এলার্জিক কন্ডিশানস, প্যানিক এটাক,
এঙজাইটিস স্টেটস, ডিপ্রেশান, ফোবিক
স্টেটস, মানসিক রোগ প্রভৃতি
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে দেখা
দিবে যা দেখে আমাদের ভেতরে কম্পন
সৃষ্টি হবে।” ওয়াশিংটন ডিসি-তে
আমেরিকান ইনিস্টিটিউট অব
হোমিওপ্যাথি’র এক সভায় প্রধান
অতিথির ভাষণে তিনি বলেন যে,
“পৃথিবীর বুকে রোগ নিরাময়ের সব
চাইতে শক্তিশালী পন্থা হলো
হোমিওপ্যাথি। আমি দেখতে পাচ্ছি
সাধারণভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের
অবস্থা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে,
তাকে পুণরুদ্ধার করার কোন আশাই নাই।
একমাত্র হোমিওপ্যাথি তাকে
পুণরুজ্জীবিত করার আশা দিতে পারে।
যেভাবে পাইকারী হারে
এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে,
তাতে ইমিউন সিষ্টেম ধ্বংস হয়ে
যাচ্ছে। এতে করে ভয়ঙ্কর সব দুরারোগ্য
রোগের আমদানীর দরজা খুলে যাচ্ছে”।
দুঃখের বিষয় এই যে, এলোপ্যাথিক
কুচিকিৎসায় কেবল যে সাধারণ মানুষ
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই
নয় ; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে
এলোপ্যাথিক ডাক্তার এবং তাদের বউ-
ছেলে-মেয়ে-নাতি-পুতিরাও তার করুণ
শিকারে পরিণত হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথি কেবল রোগের নয়, সাথে
সাথে রোগীরও চিকিৎসা করে থাকে।
হোমিও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা
বিষক্রিয়া এতই কম যে, নাই বললেই চলে।
এন্টিবায়োটিকের মতো ইহারা ব্রেনের,
হজম শক্তির কিংবা শরীরের রোগ
প্রতিরোধ শক্তির (immune system) ক্ষতি
করে না। হোমিওপ্যাথিতে পচানব্বই
ভাগ অপারেশনের কেইস শুধু ঔষধেই
সারিয়ে তোলা যায়। প্রচলিত সকল
চিকিৎসা শাস্ত্রে যাদের পড়াশুনা
আছে, তারা দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার
করেন যে, হোমিওপ্যাথি রোগ-
ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর এক
বিরাট নেয়ামত। হোমিওপ্যাথি মানুষ,
পশু-পাখি, জীব-জন্তু, বৃক্ষতরুলতাসকলের
ক্ষেত্রেই সমানভাবে কাযর্কর এবং
নিরাপদ। হোমিওপ্যাথিতে রোগের
সঠিক মূল কারণটিকে দূর করার চিকিৎসা
দেওয়া হয়। হোমিও ঔষধ প্রয়োগ করা হয়
খুবই অল্প মাত্রায় যা শরীরের নিজস্ব
রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বৃদ্ধি করার
মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে।
নব্বই ভাগ হোমিও ঔষধ তৈরী করা হয়
গাছপালা থেকে এবং বাকী দশভাগ ঔষধ
তৈরী করা হয়ে থাকে ধাতব পদার্থ,
বিভিন্ন প্রাণী এবং রাসায়নিক দ্রব্য
থেকে। হোমিও ঔষধ মানুষের জন্মগত
নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে (immune
system) সাহায্য / শক্তিশালী করার
মাধ্যমে রোগ নিরাময় এবং রোগ
প্রতিরোধ করে। পক্ষান্তরে
এলোপ্যাথিক ঔষধ ইমিউন সিষ্টেমকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কখনও কখনও
একেবারে সারাজীবনের জন্য ধ্বংস করে
দেয়। হোমিও ঔষধ দীর্ঘদিন সেবনেও এমন
কোন নিভরর্তাশীলতার সৃষ্টি হয় না
যাতে পরবর্তীতে সেটি বন্ধ করে দিলে
শরীরে কোন সমস্যা দেখা দেয়।
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন যে, “কম খরচে
এবং (রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে) কম কষ্ট
দিয়ে রোগ নিরাময়ের সর্বশেষ এবং
সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হলো
হোমিওপ্যাথি।” সবশেষে মহান আল্লাহ্
তাঁর প্রিয় বন্ধু হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা
(দঃ)-এর ওসীলায় আমাদের সকল ক্রটি-
বিচ্যুতি ক্ষমা করে পরকালীন কঠিন
শাস্তি থেকে রক্ষা করুন এই প্রার্থনা
করছি।
Wednesday, November 9, 2016
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সবচাইতে দ্রুত কাজ করে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment